মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান- কবি, গীতিকার, ছড়াকার, সম্পাদক ও সংগঠক
। জন্ম ১৯৭৩ সালের ৩১ অক্টোবর নেত্রকোণা জেলাধীন কলমাকান্দা উপজেলার চান্দুয়াইল গ্রামে। পিতা- মুহাম্মদ হাফিজ উদ্দিন, মাতা- মালেকা বেগম । তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর পদে কর্মরত। ব্যক্তিগত জীবনে এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক । প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: ১ । কামার্ত কামিনী শোকার্ত বকুল, ২। শতবর্ষে শতকাব্যে শেখ মুজিব, ৩। হান্ড্রেড হাইকু ফর শেখ মুজিব, ৪। কষ্টের কারুকাজ, ৫। বোধের বিকল সেন্সর, ৬। চেতনার চিলেকোঠা, ৭। অন্তরাকাশে অভিমানী অর্ক, ৮। মনবিহঙ্গের ডানা। ৯। ধানমণ্ডি বত্রিশ এক ব্যথার জংশন।
এছাড়াও জাতীয় সংসদের গ্রন্থাগার বুলেটিন ও বাসন্তিকা, বাকবাকুম, পাদদেশ ইত্যাদি লিটলম্যাগসহ বিভিন্ন দৈনিক এবং সাপ্তাহিক পত্রিকায় তার লেখা কবিতা প্রকাশিত হয়েছে এবং হচ্ছে। ১৭ মার্চ ২০১৮ তারিখে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে সংসদ বাংলাদেশ টিভি নির্মিত ও প্রচারিত অনুষ্ঠান 'তোমার তুলনা তুমি'র অনুষ্ঠান ভূমিকাতে কবির লেখা কবিতা স্থান পেয়েছে। তার লেখা গান- 'বাঁশবাগানে', 'মনদরিয়া', 'পদ্মাসেতু সাহসের সারগাম', 'শেষ চুম্বন', 'সাহসের তর্জনি', 'দুঃখের দাবানল', 'মা', 'ঈদ মোবারক' ইত্যাদি ইউটিউব চ্যানেলে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
২.সাহিত্য সংস্কৃতির কোন কোন শাখায় কাজ করতে আপনি স্বাচ্ছন্দবোধ করেন।
উত্তর: সাহিত্য ও সংস্কৃতির সকল শাখায় বিচরণ থাকলেও বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করি গান, কবিতা, ছড়া, প্রবন্ধ লিখায়।
৩.মানুষ হিসেবে সামাজিক দায় আছে।এটা আপনি কি ফিল করেন?
উত্তর: মানুষ সামাজিক জীব। কবি সাহিত্যিকগণ আরো বেশি সামাজিক। তাই সমাজের প্রতি তাদের দায় এবং দায়িত্ববোধ বেশি কাজ করে বলেই নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মতো সমাজের অসঙ্গতিগুলো তাদের লিখনির মাধ্যমে তুলে ধরেন।
সমাজের যে কোনো দুঃসময়ে কবি সাহিত্যিকগণ সকলে আগে এগিয়ে আসে। বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন, ৬৬র ছয়দফা, ৬৯র গণঅভ্যুত্থান, ৭১র সালের মুক্তিযুদ্ধ, ৯০র স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, শাহবাগের গণজাগরণে কবিতা, গান, পথনাটক, কথিকা ইত্যাদির মাধ্যমে জনগণকে উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে গণদাবীকে গণবিস্ফোরণে পরিণত করেছে।
৪.আপনার সমাজকর্ম,কবিতা,গল্প,উপন্যাস বা সঙ্গীতে কি সেই দায় পরিশোধের চেষ্টা করেন?
উত্তর: রাষ্ট্র যখন কোনো নাগরিকের মৌলিক অধিকার এবং সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করে তখন রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকের কিছু duties and obligations তৈরি হয়। কবি সাহিত্যিকগণ সমাজের সচেতন নাগরিক। সে জায়গা থেকেই আমারও চেষ্টা থাকে একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সরকারকে সহযোগিতা করা। সরকারের উন্নয়নকে প্রশংসা করা এবং ব্যর্থতার গঠনমূলক সমালোচনার মাধ্যমে সঠিক পথ নির্দেশনা প্রদান করা তাদের দায়িত্ব বলে আমি মনে করি। আমার লেখনির মাধ্যমে সে দায় পরিশোধের চেষ্টা সবসময় থাকে।
৫.যুগটা এখন ভঙ্গুর এবং সাম্প্রদায়িক সংঘাতের কাল।কেনো এমন হচ্ছে বলে আপনি মনে করেন?
উত্তর: এটা আমি পুরোপুরিভাবে বিশ্বাস করি না।
বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য ঐতিহ্যের অধিকারী বলেই ১৯৭১ সালে আমরা অল্পসময়ে স্বাধীনতা অর্জন করতে পেরেছি। বিশ্ব দেখেছে হিটলার কর্তৃক ইহুদি নিধন। মধ্যপ্রাচ্যে শিয়া-সুন্নি বিরোধ, ভারতবর্ষে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা।
সেই তুলনায় বর্তমান বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সংহতি ও শান্তির দেশ বলে আমি মনে করি। বিচ্ছিন্নভাবে যা ঘটে তা নিতান্তই ব্যক্তিস্বার্থে বা রাজনৈতিক স্বার্থে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ঘটানো হয়। রাষ্ট্র এ ব্যাপারে আরো সচেতন হলে তা একেবারেই বন্ধ হয়ে যাবে।
ভঙ্গুর যুগ হলে দেশের দুঃসময়ে নাগরিকদের জান-মালের ঝুঁকি নিয়ে একাত্তরের মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচারের দাবীতে রাস্তায় নেমে আসতো না। জাতীয় ইস্যুতে আমি মনে করি বাঙালির সংহতি আরো সুদৃঢ় হয়েছে।
তবে মানবিক মূল্যবোধ, নৈতিক অবক্ষয়, সংসদীয় গণতন্ত্রের চর্চা এসব জায়গায় গুরুত্ব দিলে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান আরো বেশি স্ট্যাবল হবে।
৬. সুন্দর পৃথিবী গড়তে হলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করতে হবে। মানুষকে বিজ্ঞানমনস্ক করতে হবে, আপনি কি এর সঙ্গে একমত?
উত্তর: অবশ্যই একমত। তবে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং বিজ্ঞান মনস্কতা দুটি ভিন্ন প্রসঙ্গ।
ইন্টারনেটের উৎকর্ষতার কল্যাণে পৃথিবী এখন গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত হয়েছে। তাই বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের পাশাপাশি আন্তরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক উন্নয়ন করতে হবে। একক আধিপত্য বিস্তারের মানসিকতা পরিহার করতে হবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আধিপত্য বিস্তারের মানসিকতা থেকেই শুরু হয়েছে।
আর বিজ্ঞান মনস্কতা অপসংস্কৃতি এবং কুসংস্কার থেকে মুক্ত হওয়াকে বুঝায়।
বিজ্ঞান প্রকৃত সত্যকে জানতে সহায়তা করে। যেমন- বিজ্ঞান অন্ধকারকে চিহ্নিত করে আলোর অনুপস্থিতির দ্বারা। বস্তুত বিজ্ঞান অন্ধকারকে অস্বীকার করে। আলোহীনতাই অন্ধকার।
আবার বিজ্ঞান উষ্ণতাকে স্বীকার করে শীতলতাকে স্বীকার করে না। বস্তুত উষ্ণতার অনুপস্থিতি দ্বারা শীতলতা পরিমাপ করা হয়।
এমন অনেক সত্য আছে যা মানুষ জানে না। বিজ্ঞান তা প্রমাণসহ জানিয়ে দেয়।অন্ধবিশ্বাস থেকে বিজ্ঞান মানুষকে মুক্তি দেয়।
অতএব, সুন্দর পৃথিবী গড়তে হলে অবশ্যই মানুষকে বিজ্ঞান মনস্ক হতে হবে।
৭. মানুষকে বিজ্ঞানমনস্ক করতে হলে কী কী উদ্যোগ নিতে হবে বলে আপনি মনে করেন?
উত্তর: মানুষকে বিজ্ঞানমনস্ক করতে হলে গোড়া থেকে শুরু করতে হবে। শিশুপাঠে অ-তে অজগরের ভয় না দেখিয়ে দেখাতে হবে অ-অণু, আ-তে আকাশের গ্রহ-নক্ষত্র। বিজ্ঞানের মধ্যে ডুবে থেকেও বিজ্ঞানকে যে উপলব্ধি করতে পারছি না সে উপলব্ধির সেন্সর সচল ও শক্তিশালি করতে হবে। যখন মোবাইল ফোন ছিলো না তখন কবি কাজি নজরুল ইসলাম উপলব্ধি করেছিলেন "বিশ্বজগত দেখব আমি আপন হাতের মুঠোয় পুরে"। তার উপলব্ধির সেন্সর সচল এবং শক্তিশালি ছিলো বলেই দূরতম কল্যাণকর আবিষ্কারটি তার সেন্সরে ধরা পড়েছিলো।
দৃষ্টিকে প্রসারিত করতে হবে। অন্তরকে উদারচিন্তার আধার বানাতে হবে। কথায় কবিতায় গল্পে গানে বৈজ্ঞানিক সত্যকে বেশি করে তুলে ধরতে হবে। ধর্মীয় কূপমন্ডুকতা পরিহার করতে হবে।
Post a Comment